ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান ঘাঁটি ছিল মান্নাজ , বোম্বাই ও কলকাতা । এই ঘাঁটিগুলিকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছি ।

* ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি :------

  1.  মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ( ফোর্ট সেন্ট অর্থ প্রেসিডেন্সি )  
  2.  বোম্বাই প্রেসিডেন্সি ( পশ্চিম প্রেসিডেপি ) 
  3. বাংলা প্রেসিডেন্সি ( ফোর্ট উইলিয়ম প্রেসিডেপি ) 

ফৌজদার : 

মুঘল আমলে জেলাস্তরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী । নবাবি আমলে বাংলা ১০ টি এবং বিহার ৮ টি ফৌজদারি জেলায় বিষণ্ন ছিল ।

 কোতোয়াল : 

মুঘল আমলে শহর এলাকায় শাস্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী । 

ভারতে আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার সূত্রপাত করেন লর্ড কর্নওয়ালিস । তাঁকে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতিষ্ঠাতা ও পথিকৃৎ বলা হয় ।

ঠগি : 

ঠগি শব্দটি এসেছে ' ঠগ ' শব্দ থেকে । এর অর্থ হল- ধোঁকাবাজ বা প্রতারক । ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঠগিরা , বাংলাসহ উত্তর ভারতে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল । লর্ড উইলিয়ন বেন্টিঙ্কের আমলে কর্নেল স্লিম্যান ঠগিদের দমন করেছিলেন ।

 ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ:

 ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলির আমলে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । 

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল -- ইংল্যান্ড থেকে যে নতুন কর্মচারীগণ ভারতে আসবেন তাদের ভারতীয় ভাষা , ঐতিহ্য ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া ।

হেইলবেরি কলেজ : 

১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পরিচালকবর্গ ফোর্ট ফোর্ট উইনিয়ম কলেজ উইলিয়াম কলেজটি বন্ধ করে দেয় এবং এর পরিবর্তে একই উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের হেইলবেরিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । এটি হেইলবেরি কলেজ নামেও পরিচিত । 


ইংরেজি শিক্ষার প্রসার : 

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রথমে বেসরকারি উদ্যোগে এবং পরে সরকারি উদ্যোগে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটে । ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারি , প্রগতিশীল ইউরোপীয় ও ভারতীয় , লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক , চার্লস উড প্রমুখের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল । 

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর :

 উনিশ শতকে বাংলার নারীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । তিনি ১৮৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গে ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । 

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় : 

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তিনি ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান । তাঁর উদ্যোগে ' অ্যাংলো স্কুল ' প্রতিষ্ঠিত হয় । তা ছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা করেন । 

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেব: 

 রাধাকান্ত দেব ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ও হিন্দু সমাজের একজন বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতা । শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে রাধাকান্ত দেব প্রগতিশীল ও আন্তরিক ছিলেন । তিনি ' হিন্দু কলেজ ' , ' ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি ’ ও ‘ ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি ' প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । 

ডেভিড হেয়ার :

ডেভিড হেয়ার ছিলেন স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ও ঘড়ি ব্যবসায়ী । ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি ' হিন্দু কলেজ ' , ' ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি ’ ও ‘ ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি ' প্রতিষ্ঠা করেন ।

ড্রিংকওয়াটার রিটন :

 জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বিটন ( বেথুন ) ছিলেন একজন ভারতপ্রেমী ব্রিটিশ কর্মচারী ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় ( বেথুন স্কুল ) প্রতিষ্ঠা করেন । 

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও চিকিৎসাবিদ্যাচর্চার বিকাশ : 

ভারতে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য বড়োলাট লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । বাঙালি চিকিৎসক মধুসূদন গুপ্ত এই কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেন


ব্রিটিশ কোম্পানির আমলে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাকাল প্রতিষ্ঠাতা
1. বেনারস হিন্দু কলেজ ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দ জোনাথন ডানকান
2. কলকাতা মাদ্রাসা ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দ ওয়ারেন হেস্টিংস
3. এশিয়াটিক সোসাইটি ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ উইলিয়ম জোনস
4. শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ উইলিয়ম কেরি
4. জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশন ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ আলেকজান্ডার ডাফ
5. কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ হেম্যান হোরাস উইলসন
6. কলকাতা হিন্দু কলেজ ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দ স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট এবং ডেভিড হেয়ার
7. বেথুন স্কুল ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দবিটন ( বেথুন ) সাহেব





শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান