The role of Syed Ahmed

* মুসলমান সমাজের সংস্কার আন্দোলনে সৈয়দ আহমদের ভূমিকা :

স্যার সৈয়দ আহমদ খান
 স্যার সৈয়দ আহমদ খান 

 স্যার সৈয়দ আহমদ খান ” ছিলেন মুসলমান সমাজের সংস্কারক ও আলিগড় আন্দোলনের প্রধান রূপকার । আলিগড় কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলমান সমাজের মধ্যে সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার যে জাগরণ ও বিবর্তন ঘটেছিল , তাকে আলিগড় আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয় । 

* স্যার সৈয়দ আহমদ খান জন্ম  :

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে স্যার সৈয়দ আহমদ খান জন্মগ্রহণ করেন । 

* শাস্ত্রে জ্ঞান :

 তিনি আরবি , ফারসি , উর্দু , ইংরেজি ও ইসলামীয় শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেন ।

*সদর আমিন ' পদে নিযুক্ত :

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ' সদর আমিন ' পদে নিযুক্ত ছিলেন।

 তাঁর পিতামহ ও মাতামহ উভয়েই মুঘল দরবার ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে কর্মচারী ছিলেন । 

* The Making of Pakistan গ্রন্থের রচয়িতা কে কে আজিজ বলেছেন যে , আলিগড় আন্দোলন ছিল অংশত শিক্ষাগত , অংশত ধর্মীয় এবং পুরোপুরিভাবে সাংস্কৃতিক ।

আলিগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্য : স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আলিগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল— 

  1.  ইংরেজ সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সম্প্রীতি স্থাপন করা । 
  2. মুসলমান সমাজের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো । 
  3.  মুসলমান সমাজের কুসংস্কার দূর করা । 
  4.  মুসলমান নারীদের অবস্থার উন্নতি ঘটানো ।
*সৈয়দ আহমদ খানের সঙ্কোরমূলক কার্যাবলি : 
* শিক্ষাসংস্কার : স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলমান যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে , নিজেদের শিক্ষার মধ্যে ডুবিয়ে দাও । ওটাই মুক্তির একমাত্র পথ । পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি -- 
  1. ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে সায়েন্টিফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।
  2. ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গাজিপুর ও মোরাদাবাদে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষা চালু করেন । 
  3.  তিনি ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ' আলিগড় মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । ইংরেজ সরকারও আলিগড় কলেজ প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দিয়েছিল । বড়োলাট লর্ড নর্ধবুক ব্যক্তিগতভাবে এই কলেজে ১০,০০০ ( দশ হাজার ) টাকা দান করেছিলেন । পরবর্তীকালে এই কলেজ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে । 
  4. ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ মহামেডান এডুকেশন্যাল কনফারেন্স ' ( মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন ) প্রতিষ্ঠা করেন । এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা ও প্রসার ঘটানো । 
*সমাজসংস্কার : স্যার সৈয়দ আহমদ খান উপলব্ধি করেছিলেন যে , ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের জন্যই মুসলমান সমাজ পিছিয়ে পড়ছে । এজন্য তিনি --  
  1.  মুসলমান নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সচেষ্ট হন ।
  2.  মুসলমান নারীদের পর্দাপ্রথার বিরোধিতা করেন । 
  3. তিনি মুসলমান সমাজে পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা ও ' তালাক ' প্রথার ( বিবাহ বিচ্ছেদ ) বিরোধিতা করেন । তাঁর প্রগতিশীল সংস্কারের বিরুদ্ধে গোঁড়া উলেমা ও মৌলবিরা তীব্র বিরোধিতা করেছিল । হিন্দুসমাজের উন্নতির জন্য রাজা রামমোহন রায় যা করেছিলেন , মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য সৈয়দ আহমদ অনুরূপ ভূমিকা পালন করেন ।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়