সভা ' ও ‘ সমিতি ' নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মত নিয়ে চলতে হত । এদের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তৃত এবং স্পষ্ট বিবরণ না মিললেও মনে হয় যে , ' সভা ' ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ ও জ্ঞানবৃদ্ধদের প্রতিষ্ঠান । এখানে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না । ' সমিতি ' - র অধিবেশনে গোষ্ঠীর সকল স্বাধীন মানুষই যোগ দিতেন । 

ঋক বৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতা অবাধ ছিল না । ' সভা ’ ও ‘ সমিতি ' নামে দুটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিমূলক সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় থাকার ফলে তাঁর ক্ষমতা অনেকখানি সংকুচিত হয়েছিল । বস্তুত ‘ সভা ’ ও ‘ সমিতি ' ছিল তৎকালীন শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অঙ্গ । ঋগ্বেদের ষষ্ঠ ও অষ্টম মণ্ডলে ‘ সভা ’ এবং প্রথম ও নবম মণ্ডলে ‘ সমিতি ’ শব্দটি বারে বারে বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে । অবশ্য একত্রেও শব্দ দুটির উল্লেখ পাওয়া যায় অনেক সময় । এককথায় ‘ সভা ’ ও ‘ সমিতি ’ ছিল উপজাতীয় পরিষদ । রাজার কাজকর্মের ওপর এই দুটি পরিষদের প্রভাব ছিল অপরিসীম । তবে ‘ সমিতি’র তুলনায় ‘ সভা’র জনপ্রিয়তা ছিল কম । প্রধানত সম্পদশালী ব্যক্তিরা ‘ সভা’র সদস্য হতেন । খুব সম্ভবত উপজাতীয় বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান ছিল এই সংগঠনটি । বিচারের ক্ষেত্রে ‘ সভা ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত বলে মনে হয় । ‘ সমিতি’তে প্রতিনিধিত্ব করত বেশিরভাগ মানুষ । উপজাতীয় গোষ্ঠীর প্রায় সকলেই এতে সমবেত হত । রাজা সমিতির অধিবেশনে উপস্থিত থাকতেন । ' ‘ সভা ’ ও ‘ সমিতি ’ তাঁর রাজপদে অধিষ্ঠানের বিষয়কে অনুমোদন করত । এই দুটি উপজাতীয় পরিষদ কেবল যে রাজশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখত তাই নয় , যেসব উপজাতিদের কোনো নির্বাচিত রাজা ছিল না সেই সমস্ত এলাকার শাসনকাজ পরিচালিত হত ‘ সভা ’ ও ‘ সমিতি’র দ্বারা ।

01. ডঃ রোমিলা থাপার বলেন যে , এমন বহু উপজাতি গোষ্ঠী ছিল , যাদের কোনও রাজা ছিল না । সেক্ষেত্রে উল্লিখিত সংস্থা দুটি শাসনকার্য পরিচালনা করত । সমিতির অধিবেশনে উপস্থিত থাকা রাজার অন্যতম কর্তব্য বলে বিবেচিত হত । রাজা সর্বদা বাগ্মিতা দ্বারা সমিতির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেন । ঋক বেদের শেষ স্তোত্রে বলা হয়েছে যে , জনসাধারণ যেন ঐক্যবদ্ধভাবে সমিতির অধিবেশনে যান সংগচ্ছদ্ধম্ ) , এক সুরে কথা বলেন ( সংবদধ্বন ) এবং সহমন , সহচিত্ত ও সমানমন্ত্র হতে পারেন । প্রথমদিকে সমিতি রাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করত । 

ঋকবেদে সভাকে গ্রাম্য পরিষদ ‘ এবং সমিতিকে'জন পরিষদ ' বলে অভিহিত করা হয়েছে । সভার তুলনায় সমিতি আকারে এবং ক্ষমতায় বড় ছিল । 

02. ড . রমেশচন্দ্র মজুমদার সভা ও সমিতিকে যথাক্রমে স্থানীয় পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় পরিষদ ' বলে বর্ণনা করেছেন । 

ডঃ এ . এস . অটেকর ( A.S.Altekar ) বলেন যে , প্রথমদিকে সমিতির ক্ষমতা ছিল সীমাহীন এবং তার সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হত । সমিতির বিরোধিতা রাজার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলত । 

সভা ও সমিতি