indian flag

1.জাতীয় পতাকা

*গ্রহণ :

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুলাই ভারতীয় সংবিধান সমিতি জাতীয় পতাকার অনুমোদন করে । ১৪ আগস্ট মধ্যরাত্রে সংসদ ভবনে জাতীয় পতাকাটি উত্তোলন করা হয় ও তা ভারতের নারীসমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নামে উৎসর্গ করা হয়

*বর্তমান জাতীয় পতাকার প্রেক্ষাপট :

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বেজুবাড়ায় অখিল ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির বৈঠক বসে । এই বৈঠকে অন্ধ্রপ্রদেশের পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া নামে এক যুবক জাতীয় পতাকার একটি নমুনা দেখান । গান্ধিজি এই পতাকাটিতে সাদা অংশ ও চক্রচিহ্ন সংযোজন করেন ও এর বর্তমান রূপ দেন ।

*পতাকার মাপ :

ভারতের জাতীয় পতাকার মাপের অনুপাত ২ : ৩ । জাতীয় পতাকার তিনটি রঙের ভাগ সমপরিমাপের ।

*পতাকায় ব্যবহৃত রংগুলির তাৎপর্য :

পতাকার ওপরের দিকের গৈরিক রং— ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক , মাঝখানের সাদা রং — সত্য ও শান্তির প্রতীক , নীচের সবুজ রং — বিশ্বাস ও শৌর্যের প্রতীক ।

*চক্র:

ভারতের জাতীয় পতাকার মাঝখানে সাদা রঙের ওপর নীল রঙের একটি স্তম্ভ চিহ্ন আঁকা আছে । বিহারের সারনাথে অবস্থিত সিংহ স্তম্ভের শীর্ষফলক থেকে এটি গ্রহণ করা হয়েছে । স্তম্ভটির ব্যাস সাদা ভাগের চওড়া ভাগের সমান । এতে ২৪ টি চাকা পাথি বা তার ( Spokes ) রয়েছে । স্তম্ভটি ভারতের সনাতন সংস্কৃতি , প্রগতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের প্রতীক ।

2.রাষ্ট্রীয় প্রতীক

*গ্রহণ:

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ভারত সরকার জাতীয় প্রতীক হিসেবে অশোক স্তম্ভটি গ্রহণ করে । অশোক স্তম্ভটি ছিল আসলে সারনাথে অবস্থিত অশোক স্তম্ভের প্রতিকৃতি ।

*স্তম্ভটির বিবরণ :

মূল স্তম্ভটির গায়ে চারটি পাশাপাশি দণ্ডায়মান সিংহের ছবি রয়েছে । কিন্তু জাতীয় প্রতীকে তিনটি সিংহ দৃশ্যমান হলেও একটি সিংহের ছবি আড়ালে রয়েছে । স্তম্ভটি একটি বেদীর ওপর অবস্থিত , যার মাঝখানে ধর্মচক্র আঁকা আছে । এর ডানদিকে একটি বৃষ এবং বামদিকে একটি অশ্বের আকৃতি রয়েছে । এর নীচের দিকে দেবনাগরী অক্ষরে শিলালিপি খোদিত রয়েছে , যা মুণ্ডক উপনিষদ থেকে গৃহীত । এই শিলালিপিতে উল্লেখিত বাণীটি হল সত্যমেব জয়তে , যার অর্থ হল সত্যের সর্বদা জয় হয় ।

*উৎস :

আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে গৃহীত স্তম্ভটি মৌর্য সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৪২-২৩২ অব্দে তৈরি করেন । এটি সম্রাট অশোক সেই স্থানে নির্মাণ করেন , যেখানে বুদ্ধদেব প্রথম তাঁর শিষ্যদের অষ্টাঙ্গিক মার্গের উপদেশ শোনান ।

3.জাতীয় সংগীত

*প্রেক্ষাপট :

১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে ' জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ' গানটি সর্বপ্রথম গাওয়া হয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ‘ ভারত বিধাতা শিরোনাম প্রকাশিত এই গানটির প্রথম স্তবক পরবর্তীকালে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে ।

*সময়সীমা :

জাতীয় সংগীতটি গাইতে ৫২ সেকেন্ড সময় লাগে । যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ও শেষ পংক্তিবিশিষ্ট এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি ২০ সেকেন্ডে গাওয়া হয় ।

*জাতীয় সংগীত :

জনগণমন - অধিনায়ক জয় হে ।

*রচয়িতা :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

*জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ :

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ভারতীয় সংসদীয় সমিতি জাতীয় সংগীত হিসেবে এটিকে গ্রহণ করে ।

*ইংরেজি অনুবাদ :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং এর নাম দেন ' মর্নিং সং অব ইন্ডিয়া ’।

4.জাতীয় স্তোত্র

*প্রেক্ষাপট:

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক রচিত ‘ আনন্দমঠ ' উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গান হল ‘ বন্দেমাতরম ' । ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম এই গানটি পরিবেশন করেন । পরবর্তীকালে এই গানটিকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে জাতীয় স্তোত্রের মর্যাদা দেওয়া হয় ।

*উৎস:

আনন্দমঠ উপন্যাস ।

*রচয়িতা:

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।

*জাতীয় গীত হিসেবে গ্রহণ:

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ভারতীয় সংসদীয় সমিতি জাতীয় গীত হিসেবে এটিকে গ্রহণ করে ।

*ইংরেজি অনুবাদ :

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীঅরবিন্দ " Mother I bow to thee ! ” শিরোনামে ‘ বন্দেমাতরম ' গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন ।


1. জাতীয় পতাকা কী?

উঃ- যে কোনাে দেশের ঐতিহ্য, গৌরব এবং মর্যাদার প্রতীক হল জাতীয় পতাকা

2. ভারতের জাতীয় পতাকার আকার কিরূপ?

উঃ- আয়তাকার এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩ : ২ অথাৎ লম্বা ২ ফুট হলে আড়ে ৩ ফুট। গেরুয়া, সাদা,সবুজ রং সমান প্রস্থ বিশিষ্ট হতে হয়।

3. ভারতের জাতীয় পতাকার শিল্পী কে?

উঃ- পিঙ্গলি ভেঙ্কাইয়া (অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপট্টনম গ্রামের মানুষ)।

4. ভারতের জাতীয় পতাকার আকার কিরূপ?

উঃ- আয়তাকার এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩ : ২ অথাৎ লম্বা ২ ফুট হলে আড়ে ৩ ফুট। গেরুয়া, সাদা,সবুজ রং সমান প্রস্থ বিশিষ্ট হতে হয়।

5. ভারতের জাতীয় পতাকার রং কী?

উঃ- ভারতের জাতীয় পতাকাতে অনুভূমিক ভাবে তিনটি রং আছে। সবার ওপরে গেরুয়া রং, মাঝে সাদা রং এবং নীচে সবুজ রং এবং সাদার মাঝখানে নীল রং এর অশােকচক্র থাকে।

6. কবে থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত অশােকচক্র যুক্ত পতাকা জাতীয় পতাকা রূপে পরিগণিত হয় ?

উঃ- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে।

7. জাতীয় পতাকার গেরুয়া রং কিসের প্রতীক?

উঃ- ত্যাগ, শৌর্য ও সেবার প্রতীক।

8. জাতীয় পতাকার সাদা রং কিসের প্রতীক?

উঃ- শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক।

9. জাতীয় পতাকার সবুজ রং কিসের প্রতীক?

উঃ- জীবনধর্ম, নিভকিতা এবং কর্মশক্তির প্রতীক।

10. নীল রং এর অশােকচক্র কিসের প্রতীক?

উঃ- উন্নতি ও গতিশীলতার প্রতীক।

11.জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম কী কী ?

উঃ-

ক) জাতীয় পতাকার স্থান থাকবে সবার ওপরে ।বাড়ীর ছাদে অথবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান

যেমন ২৬ জানুয়ারি, ১৫ আগস্ট -এ এই পতাকা উত্তোলিত করা যায়।

খ) এই জাতীয় পতাকার ডানদিকে বা উপরে অন্যকোনাে পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।

গ) কোনাে মিছিলে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করলে, তা সকলের সামনে থাকবে কিন্তু কখনই তা অনুভূমিক থাকবে না।

ঘ) জাতীয় পতাকা ছেড়া বা পােড়ানাে যাবে না।

ঙ) সূর্যাস্তের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করতে হবে, এবং রাষ্ট্রীয় শােকের দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করতে হয়।

12.ভারতের জাতীয় পতাকার ছবি কবে প্রথম ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছিল ?

উঃ- ১৯৪৭ সালের ২১ নভেম্বর।

13.এই পাতার নকশা কোন পতাকা থেকে গ্রহণ করা হয়?

উঃ- ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের স্বরাজ পতাকা থেকে।

14. আইন অনুযায়ী ভারতের জাতীয় পতাকা কোন্ কাপড়ে তৈরি হয়?

উঃ- খাদি।

15. ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়মানুযায়ী কারা তৈরি করেন?

উঃ- খাদি উন্নয়ন গ্রামীণ উন্নয়ন নিগম (Khadi Development & Village Industries

Commission)।

16. ভারতের জাতীয় পতাকার নকশাটি কত সালে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক সভায় অনুমােদিত হয় ?

উঃ- ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই